Saturday, March 22, 2025

চটগ্রাম ৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী গিয়াস ও আকবর, জামায়াতের মঞ্জু


 ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বিএনপির হেভিওয়েট দুই প্রার্থী। 

একজন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও অপরজন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকার। দলীয় মনোনয়ন যুদ্ধে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। দুজনই দলের বার্তা ও নিজের ইশতেহার, প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় যাচ্ছেন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসাবে আছেন শাহজাহান মঞ্জু। তিনি রাউজান উপজেলা জামায়াতের আমির। বিএনপির সমর্থকরা বলছেন, ৫ আগস্টের আগে রাউজানে বিএনপির অস্তিত্ব বিলীন থাকলেও পটপরিবর্তনের পর বিএনপি দলীয় কোন্দলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারীরা প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত-সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। বলতে গেলে রাউজানে দলীয় কোন্দলে এখনই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিএনপি। তবে দুজনের মধ্যে কে মনোনয়ন পাবেন সেটি নিশ্চিত করতে পারছেন না কেউ।

এদিকে ৫ আগস্টের পর মাঠে সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের। এর মধ্যে বিএনপির সাংগঠনিক কমিটি নিয়ে তৃণমূলে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি পক্ষ উপজেলা ও পৌরসভার আংশিক কমিটি ঘোষণা দিলেও ‘পকেট কমিটি’ আখ্যা দিয়ে অন্য পক্ষকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে সভা-সমাবেশ করছে। এ পর্যন্ত প্রত্যেক ইউনিয়নে দলীয় ব্যানারে ইফতার মাহফিল সম্পন্ন করেছেন গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী সমর্থিত নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে রাউজান সরকারি কলেজ মাঠ ও চুয়েটসংলগ্ন পাহাড়তলী বাজারে অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজে অংশগ্রহণ করেন। একই সঙ্গে দলীয় ব্যানারে বেশ কয়েকটি ইফতার মাহফিল সম্পন্ন করেছেন গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারীরা। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় গোলাম আকবর কোনো ইফতার মাহফিলে অংশ নেননি।

বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ দলীয় কোন্দল। এতদিন বিএনপির নেতাকর্মীরা এলাকায় অবস্থান করতে না পারায় তাদের কোন্দল চোখে পড়েনি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে এ পর্যন্ত একাধিকবার সংঘর্ষও হয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে তৃণমূলে।

অন্যদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসাবে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন শাহজাহান মঞ্জু। তিনি ইতোমধ্যে দলের বড় বড় কয়েকটি সমাবেশ ও ইফতার মাহফিল সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। তৃণমূলেও কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন জোরেশোরে।

মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী স্বৈরাচারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দীর্ঘ ১৬ বছর আমাকে আমার জন্মভূমি, আমার নির্বাচনি এলাকা রাউজান থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। ভুয়া ও বানোয়াট একাধিক মামলা দিয়ে আমাকে জেলে ঢুকিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। ব্যবসায়িকভাবে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নিঃশেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে আমি সব বাধা কাটিয়ে প্রিয় রাউজানবাসীর মাঝে ফিরে এসেছি। আমি এসেছি রাউজানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও উন্নয়নের বার্তা নিয়ে। সব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের হুঁশিয়ারি নিয়ে। সবকিছু বিবেচনা করলে দলের পক্ষ থেকে আমি মনোনয়ন পাওয়ার আশাবাদী।

জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকার যুগান্তরকে বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই জাতীয়তাবাদী আদর্শের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছি। বিগত সাড়ে ১৫ বছর আন্দোলন, সংগ্রাম ও নির্যাতনের পরও মাঠে ছিলাম। আমার নামে ১৪টি নাশকতার মামলা চলমান। আমি কখনো মাঠ ছেড়ে যাইনি। নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চায়, যে নেতাকে কাছে পাওয়া যায়, দল তাকেই মনোনয়ন দিক। সেই হিসাবে তৃণমূলের দাবি দলীয় মনোনয়ন যেন আমিই পাই।

জামায়াতে ইসলামী রাউজান উপজেলা শাখার আমির শাহজাহান মঞ্জু বলেন, অনেক বছর জুলুম-নির্যাতন ভোগ করে দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলাম। নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এলাকায় আরও প্রবলভাবে সক্রিয় হয়েছি। কোথাও যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, সে ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ভূমিকা নিয়েছি। চাঁদাবাজি, লুটপাট, দখলবাজিকে প্রশ্রয় দেইনি। আমাদের দলের কেউ কোনো বিশৃঙ্খলায় জড়িত নেই এবং এ বিষয়ে প্রমাণও কেউ দিতে পারবে না। সবকিছু মিলিয়ে জনগণ জামায়াতে ইসলামীকে একটি আদর্শিক দল হিসাবে গ্রহণ করেছে।

রাউজান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে চট্টগ্রাম-৬ আসন গঠিত। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এ আসনটির গুরুত্ব বেশি। ১৯৯৬ সাল থেকে আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যায়। এর আগে ১৯৭৩ সালের পর সংসদীয় এ আসনটি বিএনপির দখলেই ছিল। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আসনটিতে অধিকাংশ সময় সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর দখলে ছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হন। তিনি টানা পাঁচবার এই আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। এই সময়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জনপ্রতিনিধি তৈরির প্রথা চালু করেন ফজলে করিম। তবে গণ-অভ্যুত্থানের পর এই জনপদের মাঠের হালচাল বদলে গেছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা ভোটের মাঠে নেই। ফলে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলো। দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপি-জামায়াতের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এমন সমীকরণ সামনে রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছে দল দুটি।


শেয়ার করুন