ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী নারীদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৬ সালে দেশে প্রতি হাজারে বিবাহবিচ্ছেদের হার ছিল ০.৬, যা বর্তমানে বেড়ে ১.১-এ দাঁড়িয়েছে। বিচ্ছেদের জন্য আবেদনকারীদের মধ্যে ৭০.৮৫% নারী এবং ২৯.১৫% পুরুষ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নারীদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা ও শিক্ষার প্রসার তাদের আত্মসম্মানবোধ বাড়িয়েছে, ফলে তারা বৈবাহিক অশান্তি মেনে নিতে চান না।
ভারতে বিবাহবিচ্ছেদের হার তুলনামূলকভাবে কম। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে বিবাহবিচ্ছেদের হার মাত্র ১%, যা বিশ্বে সর্বনিম্ন। তবে, শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী নারীদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতা নিয়ে ভারতে নির্দিষ্ট কোনো গবেষণা পাওয়া যায়নি।
ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের হার সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য সীমিত। তবে, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণে এসব দেশে বিবাহবিচ্ছেদের হার তুলনামূলিকভাবে কম হতে পারে। তবে, শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী নারীদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো গবেষণা পাওয়া যায়নি।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় দেখা যায়, নারীদের শিক্ষার প্রসার ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা তাদের আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা বাড়িয়েছে। ফলে, তারা বৈবাহিক জীবনে অসম্মান বা নির্যাতন মেনে নিতে চান না। তবে, বিবাহবিচ্ছেদের এই প্রবণতা সমাজে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় প্রভাব ফেলতে পারে। ইতিবাচক দিক হলো, নারীরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হচ্ছেন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন। নেতিবাচক দিক হিসেবে পরিবার ভাঙনের ফলে সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়তে পারে এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হতে পারে।
সার্বিকভাবে, শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী নারীদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের হার বৃদ্ধির পেছনে তাদের আত্মমর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি একটি প্রধান কারণ। তবে, এই প্রবণতা সমাজে বিভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারে, যা নিয়ে আরও গভীর গবেষণা প্রয়োজন।