কক্সবাজার প্রতিনিধি-পেকুয়ার আলো
কক্সবাজার শহরে ইজিবাইক চালককে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যায় জড়িত তিন সহোদরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব–১৫। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরাসহ বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকালে র্যাব–১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। আটকরা হলেন কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হালিমা পাড়ার মোহাম্মদ হোসেন ওরফে মাছনের ছেলে মো. মোস্তফা, মো. আনোয়ার ও মো. ইমরান এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দা মো. করিম। ঘটনায় নিহত মুজিবুর রহমান (৩৫) কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হালিমা পাড়ার বাসিন্দা আব্দুল জলিলের ছেলে। লে. কর্নেল কামরুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে কিস্তিতে নেওয়া মো. আনোয়ারের মালিকানাধীন একটি ইজিবাইক চুরির ঘটনা ঘটে। আর সেই ইজিবাইকটি মুজিবুর রহমান চোর চক্রের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে আনে। পরে গাড়িটি ওই টাকাগুলো পরিশোধের শর্তে আনোয়ার কাছে হস্তান্তর করে। টাকাগুলো পরিশোধ না করায় আনোয়ারকে মুজিবুর রহমান চাপ প্রয়োগ করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। গত রোববার সন্ধ্যায় কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বউবাজার এলাকায় ইয়াছিন আরাফাতের ইজিবাইকের গ্যারেজে এই ক্ষোভের জেরে মুজিবুর রহমানকে অতর্কিত অবস্থায় মোস্তফা, আনোয়ার ও ইমরানসহ আরও কয়েকজন মিলে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে হামলাকারীদের উপর্যুপরি কয়েকটি ছুরিকাঘাতে মুজিবুর রহমান আহত হয়। পরে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এই র্যাব কর্মকর্তা জানান, শনিবার মধ্যরাতে কক্সবাজার শহরের লাইট হাউজ পাড়া এলাকায় মো. আনোয়ারকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার হেফাজত থেকে দেশিয় তৈরি একটি বন্দুক ও ৭টি গুলি উদ্ধার করা হয়। পরে গ্রেপ্তার আসামির স্বীকারোক্তি মতে, গতকাল সোমবার ভোর রাতে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর থেকে আত্মগোপন অবস্থায় মো. মোস্তফা ও তার ভাই ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় মোস্তফার হেফাজত থেকে হত্যাকাণ্ডের ব্যবহৃত ছোরাটিও উদ্ধার হয়। ঘটনায় জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর র্যাবের আরেকটি দল সোমবার ভোর রাতে কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়ায় পৃথক একটি অভিযান চালায়। এ সময় তাদের সহযোগী মো. করিম নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এতে তার কাছ থেকে দেশিয় তৈরি একটি বন্দুক উদ্ধার করা হয়। এছাড়া গ্রেপ্তার আসামিদের স্বীকারোক্তি মতে ভোর রাতে শহরের তারবনিয়ারছড়া এলাকায় সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের গোপন আস্তানা সাদ্দাম হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। র্যাব সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে সাদ্দাম হোসেন পালিয়ে যায়। পরে তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ৯টি লম্বা কিরিচ ও ৪টি ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার আসামিরা সকলে পেশায় ইজিবাইক চালক এবং সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য। তারা ইজিবাইকচালক পেশার আড়ালে পর্যটন শহরে ছিনতাই ও অপহরণসহ নানা অপরাধ সংঘটনের সাথে জড়িত। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে এসব অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে কক্সবাজার সদর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।