Friday, March 14, 2025

ওসি পাচলাইশ বেশি করছে....’ তালিকাভুক্ত অপরাধীর সহযোগীর সঙ্গে বায়েজিদ থানার ওসির কথোপকথন

 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পাঁচলাইশ থানার 
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমানকে নিয়ে
 বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার পুলিশের তালিকাভুক্ত 
চাঁদবাজ, মারামারি, ছিনতাই ও হত্যাচেষ্টা মামলার 
আসামি সাইফুল ইসলাম ওরফে বার্মা সাইফুলের 
এক সহযোগীর সঙ্গে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি 
আরিফুর রহমানের মোবাইলের কথোপকথনের একটি 
অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে।দুই দিন আগে সাইফুল ইসলাম সাইফ নামের একটি আইডি থেকে সেটি পোস্ট করা হলে পরে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

 ফোনে ওসি আরিফুরকে পাঁচলাইশ থানার ওসিকে নিয়ে বিষোদগার করতে শোনা গেছে। তবে ওসি কার সঙ্গে কথা বলেছেন সেই ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে না পারলেও একাধিক সূত্র বলছেন এটি বার্মা সাইফুলের ‘কাছের লোক’।

পুলিশ, দলীয় সূত্র ও স্থানীয় লোকজন জানান, বার্মা সাইফুল ওরফে সাইফুল ইসলাম নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন। তিনি বায়েজিদ বোস্তামী থানার বার্মা কলোনির নুরুল আমিন কসাইয়ের ছেলে। তার আরও দুই ভাই রয়েছে—সবুজ ও ফাহিম। সবুজ পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। সাইফুল ও তার ভাই সবুজ নগর ছাত্রদলের সাবেক নেতা আহমদুল আলমের অনুসারী। আবার আহমদুল আলম নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের অনুসারী বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাদের চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি বেপরোয়া আকার ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

‘বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসির সঙ্গে কথোপকথন’

এক মিনিট সাত সেকেন্ডের কথোপকথনের অডিওতে ওসি আরিফুর রহমানকে বলতে শোনা যায়, ‘ধরাই দিলে একদিনের ভেতরে জামিন করিয়ে দেবো। আমাকে চ্যালেঞ্জ করে দিছে কমিশনার স্যার। না ধরলে তুমি চাকরি করতে পারবে না।’

এরপরে ওসি আবার বলেন, ‘আর এটার মূল কারণ ওসি পাঁচলাইশ। বলেছে, আমি নাকি বার্মা সাইফুল, বার্মা সবুজ, বার্মা ফাহিমকে (তিন ভাইকে) পালি। এদের থেকে চাঁদা নেই।’

ফোনের অপরপ্রান্তের ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়—’ওটাই আরকি স্যার’।

ওসি আবার বলেন, আর জামায়াত! জামায়াত দিয়ে কমিশনার স্যারকে বলে বার্মা সাইফুলের জ্বালায় এরা বায়েজিদ পাঁচলাইশে কোথাও থাকতে পারছে না। আর এদিকে আমার ওপর দিয়ে প্রেশার যাচ্ছে।’

এরপর ওই ব্যক্তি বলেন, ‘স্যার মনে করেন আমিও তো পাঁচলাইশে আসি। সেক্ষেত্রে আপনাকে কল দিলে কি সঙ্গে সঙ্গে পাব?’

ওসি বলেন, ‘হ্যাঁ, পাইবা, পাইবা। ওসি পাঁচলাইশ বেশি বাড়াবাড়ি করছে। তার এলাকায় কেউ মারামারি করতে এলেই বলে বার্মা সাইফুলের গ্রুপ। বেশি করছে আমার প্রতি কমিশনারকে। ডিসি (উত্তর), কমিশনার খালি দোষ দেয় আমি কেন বার্মা সাইফুলকে ধরি না। কই গেলাম, আমি ভাইরে না চিনিও না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমি বার্মা সাইফুলকে চিনি না, দেখিও নাই। তাকে আমরা ধরার জন্য নানান টেকনিক অ্যাপ্লাই করছি। সন্ত্রাসীরা বাঁচার জন্য অনেক কিছু করছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদের মনোবল ভাঙার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে ডিমরালাইজ করার চেষ্টা করছে।’

তবে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা ফোন কলের ভয়েসটি ওসি আরিফুরের বলে নিশ্চিত করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বার্মা সাইফুল ২০২১ সালে বায়েজিদ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছিলেন।

সাইফুলের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারামারি, অস্ত্র ও বিস্ফোরকের ২৫টিরও বেশি মামলা রয়েছে। ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনায় তিনি এর আগে পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছেন।

সবশেষ গত ২৫ জানুয়ারি রাতে নগরীর বায়েজিদ টেকনিকাল এলাকা থেকে তিনজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় বার্মা সাইফুল গ্রুপের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি ও থানা পুলিশ। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে, এরা বার্মা সাইফুলের লোক এবং সাইফুল পলাতক, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে এলাকায় সাইফুল প্রকাশ্যে ঘুরলেও তাকে খুজে পাচ্ছে না বায়েজিদ থানা পুলিশ। থানা পুলিশের একাধিক অফিসারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বায়েজিদ থানার ওসি আরিফুরের সঙ্গে বার্মা সাইফুলের সখ্যতা থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। থানায় তাদের দুই ভাইয়ের যাতায়াতও রয়েছে।


শেয়ার করুন
close